মাহে রমাদানের মর্যাদা ও মর্যাদার কার

স্বয়ং কুরআন মজিদেই মাহে রমযানের মর্যাদার কারণসমূহ উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে মহান আল্লাহ পাকের কালাম থেকে মাহে রমযানের কয়েকটি মর্যাদা উল্লেখ করা হলো:



কুরআন নাযিলের  মাস: রমযান মাসের মর্যাদার মূল কারণ, এ মাসে কুরআন মজিদ নাযিল করা হয়েছে:
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ
অর্থ: রমযান মাস হলো সেই মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে আল কুরআন  (আল কুরআন ২: ১৮৫)
হাদিস থেকে জানা যায় কুরআন নাযিল হয়েছে এ মাসের ২১,২৩,২৫,২৭ অথবা ২৯ তারিখে ।

লাইলাতুল কদরএর মাস: মহান আল্লাহ স্পষ্টভাবে আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন, কুরআন নাযিল হয়েছে লাইলাতুল কদরে:
إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ
“আমি এটি (কেরআন) নাযিল করেছি কদর রাতে ।” (আল কুরআন ৯৭:১)
কদর মানে: ১. মর্যাদা, ২. তকদির বা ফায়সালা, ৩. শক্তি বা ক্ষমতা। সুতরাং এ রাত হলো, মর্যাদার রাত, ভাগ্যবন্টন বা ফায়সালার রাত এবং শক্তিশালী রাত।

হাজার মাসের চেয়ে উত্তম রাতওয়ালা মাস: এ মাসেই রয়েছে এমন একটি
রাত যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম:
وَمَا أَدْرَاكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِ – لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ أَلْفِ شَهْرٍ
অর্থ: “তুমি কী করে জানবে ‘কদর রাত’ কী? কদর রাত উত্তম ও কল্যাণময় হাজার মাসের চেয়ে ।” (আল কুরআন ৯৭: ২-৩)

মুবারক রাতের মাস: এ মাসেই রয়েছে এক বরকতময় (মোবারক) রাত:
إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُّبَارَكَةٍ ۚ إِنَّا كُنَّا مُنذِرِينَ
অর্থ: আমরা এটিকে (এ কুরআনকে) নাযিল করেছি এক মুবারক রাতে। আমরা তো সতর্ককারী । (আল কুরআন ৪৪: ৩)

ফায়সালার রাতওয়ালা মাস : এ মাসেই রয়েছে ফায়সালার রাত:
فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ – أَمْرًا مِّنْ عِندِنَا ۚ إِنَّا كُنَّا مُرْسِلِينَ
‎অর্থ: সেই রাতে প্রতিটি বিষয় ফায়সালা করা হয় বিজ্ঞতার সাথে। আমার নির্দেশক্রমে, আমি তো রাসূল প্রেরণ করে থাকি। (আল কুরআন ৪৪: ৪-৫)

জিবরিল  ফেরেশতাগণের অবতরণের রাতের মাস:
تَنَزَّلُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ فِيهَا بِإِذْنِ رَبِّهِم مِّن كُلِّ أَمْرٍ
অর্থ: সে রাত্রে নাযিল হয় ফেরেশতাকুল এবং রূহ (জিবরিল), প্রত্যেক কাজের জন্য তাদের রবের অনুমতিক্রমে । (আল কুরআন ৯৭: ৪)

রহমত বিতরণের রাতের মাস:
أَمْرًا مِّنْ عِندِنَا ۚ إِنَّا كُنَّا مُرْسِلِينَ – رَحْمَةً مِّن رَّبِّكَ ۚ إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
অর্থ: আমাদের নির্দেশক্রমে। আমরা তো রাসূল  পাঠিয়ে থাকি, তোমার প্রভুর পক্ষ থেকে রহমত হিসেবে, নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞ। (আল কুরআন ৪৪: ৫-৬)

শান্তির রাতের মাস:
سَلَامٌ هِيَ حَتَّىٰ مَطْلَعِ الْفَجْرِ
অর্থ: শান্তিময় পুরো সে রাত ফজর উদয় হওয়া পর্যস্ত । (আল কুরআন ৯৭: ৫)

মানবজাতির মুক্তির দিশারি অবতীর্ণের মাস:
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِّلنَّاسِ
অর্থ: তাতে নাযিল করা হয়েছে আল কুরআন, যা মানবজাতির জন্যে ‘জীবন যাপনের পথ ও মুক্তির দিশারি।’ (আল কুরআন ২:১৮৫)

১০সত্যসঠিক পথের প্রমাণ নাযিলের  মাস:
অর্থ: এবং (এ কুরআন) জীবন যাপনের পথ হিসেবে সুস্পষ্ট প্রমাণ। (২: ১৮৫)
وَبَيِّنَاتٍ مِّنَ الْهُدَىٰ

১১সত্যমিথ্যা যাচাইয়ের মানদণ্ড (criterionনাযিলের  মাস:
وَالْفُرْقَانِ
অর্থ: আর (এ মাসে নাযিলকৃত কুরআন ভালোমন্দ, ন্যায় অন্যায়, সঠিক-বেঠিক, এবং সত্যাসত্যের) অকাট্য মানদন্ড (criterion) | (আল কুরআন ২:১৮৫)

১২.সিয়াম সাধনার মাস:
فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ
অর্থ: সুতরাং তোমাদের যে কেউ এ মাসের সাক্ষাত লাভ করবে, তাকে অবশ্যি পুরো রমযান) মাসটিতে রোযা পালন করতে হবে ৷ (আল কুরআন ২:১৮৫)
এগুলো গেলো আল্লাহর বাণী। এখন আমরা এ প্রসংগে কয়েকটি হাদিস উল্লেখ করছি।

১৩আকাশের দরজা উন্মুক্ত রাখার মাস :
إِذَا دَخَلَ رَمَضَانُ فُتِّحَتْ أَبْوَابُ السَّماَء …
অর্থ: “যখন রমযান মাসের আগমন ঘটে, তখন আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়……।” (সহীহ বুখারি ও মুসলিম)

১৪জান্নাতের দুয়ারসমূহ খুলে রাখার মাস :
إِذَا دَخَلَ رَمَضَانُ فُتِّحَتْ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ …
অর্থ: “যখন রমযান মাসের আগমন ঘটে, তখন জান্নাতের দুয়ারগুলো খুলে দেয়া হয়……।” (সহীহ বুখারি ও মুসলিম)

১৫রহমতের দুয়ার খোলা রাখার মাস :
إِذَا دَخَلَ رَمَضَانُ فُتِّحَتْ أَبْوَابُ الْرَّحْمَةِ …
অর্থ: “যখন রমযান মাসের আগমন ঘটে, তখন রহমতের দুয়ারসমূহ খুলে দেয়া হয়।” (সহীহ বুখারি ও মুসলিম)

১৬জাহান্নামের দুয়ার বন্ধ রাখার মাস :
إِذَا دَخَلَ رَمَضَانُ غُلِّقَتْ أَبْوَابُ جَهَنَّمَ …
অর্থ: “যখন রমযান মাসের আগমন ঘটে, তখন জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়।” (সহীহ বুখারি ও মুসলিম)

১৭অতীতের গুনাহ মাফ করে দেয়ার মাস: প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ. وَمَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ. وَمَنْ قَامَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ . (متفق عليه)
অর্থ: “যে কেউ ঈমান ও আশা নিয়ে রমযানের রোযা রাখবে, তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। যে কেউ ঈমান ও আশা নিয়ে রমযানের রাতগুলোতে (ইবাদতে) দাঁড়াবে তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। যে কেউ ঈমান ও আশা নিয়ে কদর রাত (ইবাদতে) কাটাবে তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।” (সহীহ বুখারি ও মুসলিম)

No comments

Thank you

Theme images by cstar55. Powered by Blogger.