পুরুষের ধাতু দৌর্বল্য (Spermatorrhoea) – কারণ, লক্ষণ এবং চিকিত্স
ধাতু
দৌর্বল্য (Spermatorrhoea) কি :- অনৈচ্ছিক বীর্যপাতের নামই হলো ধাতু
দুর্বলতা । এ ধরনের সমস্যায় সপ্নাবেশ বা কম উদ্দীপনা ছাড়াই বারবার
বীর্যস্থলন হয়। সাধারণভাবে বলতে গেলে ইহা নিজে কোন রোগ নয় বরং অন্যান্য রোগের
উপসর্গ।
ধাতু
দৌর্বল্য (Spermatorrhoea) এর কারণসমূহ :- যৌবন কালে অস্বাভাবিক উপায়ে শুক্র
ক্ষয় হলে এই সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে, হস্তমৈথুন
এবং অতিরিক্ত যৌন মিলন করা ইহার প্রধান কারণ। কোষ্ঠকাঠিন্য, অর্শ্বরোগ ইত্যাদির কারণেও ইহা হতে
পারে। আবার অনেক সময় সিফিলিস, গনোরিয়া, ধ্বজভঙ্গ রোগের লক্ষণ স্বরূপ এই
সমস্যা দেখা দিতে পারে।
স্বাভাবিক ভাবে হরমোনের অভাবে অথবা কৃত্রিম
অতিরিক্ত মৈথন বা অস্বাভাবিক শুক্রপাত করতে থাকলে স্পারম্যাটোরিয়া সৃষ্টি
হতে পারে। আবার অনেক সময় অপুষ্টি বা ভিটামিন প্রভৃতির অভাবে অথবা দীর্ঘদিন
রক্তশূন্যতা বা নানা প্রকার রোগে ভোগার ফলে ইহা দেখা দিতে পারে। যারা
সাধারণত বেশি পরিমান যৌন মিলন করে, অতিরিক্ত
শুক্রক্ষয় করে তাদের শুক্রথলিতে শুক্র বেশি সঞ্চিত থাকে না। ইহার ফলে তাদের শুক্র নির্গত হলে দেখা যায়
তাদের শুক্রে ঘনত্ব (viscosity) কম এবং
তা দেখতে বেশ তরল। ইহাতে রোগীর ভয়ানক দুর্বলতা সৃষ্টি হয়।
ধাতু
দৌর্বল্য (Spermatorrhoea) এর লক্ষণসমূহ :- স্পারম্যাটোরিয়ার লক্ষণযুক্ত রোগীর
শুক্র অত্যন্ত তরল হয়। অনেক সময় পাতলা পানির মত। নির্গত শুক্রে ঘনত্ব (viscosity) খুব কম। রোগী ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং দেহগত অপুষ্টির ভাব
প্রকাশ পেয়ে থাকে। দেহের সৌন্দর্য নষ্ট হয় এবং জীর্ণ শীর্ণ হয়ে পড়ে, মুখ মলিন এবং চক্ষু কোঠরাগত হয়ে পরে।
দেহে প্রয়োজনীয়
প্রোটিন এবং ভিটামিনের প্রবল অভাব পরিলক্ষিত হয়। রোগীর জীবনীশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং নানা
প্রকার রোগে অতি সহজেই আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
দেহে
যৌন হরমোন বা পিটুইটারি এড্রিনাল প্রভৃতি গ্রন্থির হরমোন কম নিঃসৃত হয়। ইহার
ফলে দেহে যৌন ক্ষমতা কমে যায় এবং শুক্র ধীরে ধীরে পাতলা হতে থাকে। আবার এর
কারণে সিফিলিস, গনোরিয়ার
মত রোগের প্রকাশ
লাভ করার সুযোগ হয়। শুক্রপাত বেশি হওয়ার দরুন দৈহিক এবং মানসিক দুর্বলতা বৃদ্ধি পায়, মাথা ঘোরে, বুক ধড় ফড় করে, মাথার যন্ত্রণা দেখা যায়। আক্রান্ত ব্যক্তি সর্বদাই অস্থির বোধ
করে। বসা থেকে উঠলেই মাথা ঘোরে এবং চোখে অন্ধকার দেখে, ক্ষধাহীনতার ভাব দেখা দেয়। ইহাতে
পেনিস বা জননেদ্রীয় এতটাই
দুর্বল হয়ে যায় যে, তার
শুক্রের ধারণ শক্তি একেবারে কমে যায়। রাত্রে স্বপ্ন দেখে শুক্র ক্ষয় হয়, আবার দিনের বেলায়ও নিদ্রাকালীন স্বপ্ন
দেখে শুক্রপাত
হয়।
সমস্যা
ধীরে ধীরে কঠিন আকার ধারণ করলে সামান্য উত্তেজনায় শুক্রপাত হয়।, স্ত্রীলোক দর্শনে বা স্পর্শে শুক্রপাত
ঘটে এমনকি মনের
চাঞ্চল্যেও শুক্রপাত হয়। পায়খানার সময় কুন্থন দিলে শুক্রপাত হয়, স্মরণশক্তি কমে যায়, বুদ্ধিবৃত্তি কমে যায়, পুরুষাঙ্গের ক্ষীনতা ও দুর্বলতা দেখা যায়, চোখের চারদিকে কালিমা পড়ে, অকাল বার্ধক্য এবং ধ্বজভঙ্গ রোগের লক্ষণ দেখা দেয়। এই বিশ্রী সমস্যার
লক্ষণ মানুষের বিশেষ করে তরুনদের উন্নতির পথে প্রধান একটা অন্তরায় হয়ে
দাড়ায়।
জটিল
উপসর্গসমূহ :- অতিরিক্ত
অপুষ্টি রোগ ভোগ, রক্ত
শুন্যতা, দুর্বলতা প্রভৃতি উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই ইহাতে
তেমন জটিল উপসর্গ দেখা দেয় না। যাদের হরমোনের অভাব হয় বা বীর্যে শুক্রকীট
থাকে না তাদের অনেক সময় এর দরুন সন্তান হয় না। এছাড়া শুক্রের ঘনত্ব (viscosity) নস্ট হওয়ার কারণে ইহা অতি সহজেই নির্গত হয় এবং এর ফলে যৌন আনন্দ পাওয়া
যায় না। অনেক সময় এর ফলে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে মানসিক অশান্তি দেখা
দেয় এবং নানা পারিবারিক সমস্যার সৃষ্টি হয়। এই উপসর্গযুক্ত পুরুষদের স্ত্রীরা
মানসিক অশান্তি এবং হতাশায় ভোগে। পরোক্ষভাবে সাংসারিক অশান্তি এই রোগের
একটি জটিল উপসর্গ বলা যেতে পারে।
আরোগ্যকারী চিকিত্সা :– উপরে
বর্ণিত লক্ষণগুলির সব কয়টি বা কোন কোনটি এই সমস্যায় আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। যেহেতু
এই অবস্থায় আক্রান্ত ব্যক্তি মানসিক ভাবে অনেক দুর্বল থাকে তাই রাস্তা
ঘাটের তথাকথিত হারবাল, কবিরাজ, ভেষজ নামধারী চিকিত্সকরা তাদের খুব সহজেই
প্রতারিত করে থাকে। কিন্তু দেখা যায় তাদের চিকিত্সায় এই সমস্যাটি পুরুপুরি
নির্মূল হয় না। আর তখন ঐসব চিকিত্সকরা
আক্রান্ত ব্যক্তিকে নানা প্রকার উত্তেজক ঔষধ দিয়ে এইগুলি সব সময় খেয়ে যেতে বলে। আর সহজ সরল ব্যক্তিরা
আসল সত্যটা না জানার কারণে তাদের দেয়া ক্ষতিকর উত্তেজক ঔষধগুলি দিনের
পর দিন ব্যবহার করে করে সমস্যাটিকে আরো জটিল থেকে জটিলতর করে তুলে।
অথচ
যথাযথ হোমিওপ্যাথি চিকিত্সায় ধাতু দৌর্বল্য (Spermatorrhoea) স্পারম্যাটোরিয়ার সমস্যাটা একেবারে
মূল থেকে নির্মূল
হয়ে রোগী পুরুপুরি সুস্থ হয়ে উঠে। তার জন্য খুব বেশি দিন ধরে ঔষধও খাওয়া লাগে না। তাই এ ধরনের সমস্যায়
কেউ আক্রান্ত হলে অযথা উত্তেজক এবং ক্ষতিকর ঐসব ঔষধ খেয়ে খেয়ে আপনার যৌন
জীবন বিপর্যস্থ না করে যথাযথ চিকিৎসা নিন, এই সমস্যা থেকে নিশ্চিত এবং খুব
দ্রুতই আরোগ্য লাভ করবেন ইনশাল্লাহ।
No comments
Thank you